December 24, 2024, 4:00 pm

যুক্তরাষ্ট্র কি এখনও বিশ্বের মুরব্বি?

Reporter Name
  • Update Time : Saturday, June 6, 2020,
  • 108 Time View

অনলাইন ডেস্ক

বার্লিন প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ দশকের পর দশক ধরে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, স্বাধীনতা অর্জন করা সবসময়ই কঠিন। আজ সেই বার্লিন প্রাচীরের একটি অংশে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ হেফাজতে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের ম্যুরাল অঙ্কিত হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে ফ্লয়েডের শেষ উক্তি, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’ এই উক্তিটি এখন আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, কত দ্রুত স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া যায়!

গত মাসের শেষ দিকে ফ্লয়েডকে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, আট মিনিটেরও বেশি সময় হাঁটু দিয়ে ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেকে চাউভিন নেল্ট। কৃষ্ণাঙ্গের প্রতি এক জন শেতাঙ্গ পুলিশের এই  বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কেবল যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভের তীব্রতা এতোটাই বেশি ছিল যে, ৪০টি শহরে কারফিউ জারি করে রাজ্য সরকারগুলো। এই বিক্ষোভ দমনে পুলিশ রীতিমতো সহিংস আচরণ শুরু করে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লয়েডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ দূরে থাক বরং তিনি বিক্ষোভকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলেছেন। বিক্ষোভ দমনে তিনি সেনা মোতায়েনেরও হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্পের সেই হুমকি উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা এখনও তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বিক্ষোভের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে  ইউরোপ, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারীদের যেভাবে মোকাবিলা করছে পুলিশ এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট যে ধরনের মন্তব্য করছেন তাতে একটি বড় প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। সেটি হচ্ছে-যুক্তরাষ্ট্র কি এখনও বিশ্বের নৈতিক মুরুব্বি? জবাব হচ্ছে-না।

৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব মোড়লের স্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি দোর্দাণ্ড প্রতাপশালী হয়েছে। তবে টুইন টাওয়ার হামলার পর তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবক্ষয় শুরু হয়। ওই সময় গুয়ান্তানামো বে ও আবু গারিবে বন্দিদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালাতো মার্কিন গোয়েন্দারা।

ওবামা আমলে এই নির্যাতন কিছুটা কমে আসে। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সরাসরি সৌদি রাজপরিবারের সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে আসে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে একেবারে নীরব ভূমিকা পালন করে। বরং সৌদির সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কূটনীতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় ট্রাম্প প্রশাসনের। সর্বশেষ করোনা মহামারিকালে সারাবিশ্ব যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে, সেখানে ট্রাম্প সংস্থাটিকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন। এর আগে সংস্থাটিকে অনুদান দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি।

চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে এর সম্পাদক হু শিজিন লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে গণতন্ত্রের বাতিঘর বলে যে দাবি করে এর অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ দমন প্রক্রিয়া সেই নৈতিক ভিত্তিকে মুছে ফেলেছে।’

মার্টিন লুথার কিংয়ের একটি উক্তি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’

ওয়াশিংটনের দিকে সমালোচনার তীর ছুঁড়েছে তেহরানও। টুইটারে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলো প্রতিবাদকারী ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে নৃশংতার দৃশ্য।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও হোয়াইট হাউজের সমালোচনা করেছেন। অন্যান্য দেশের নিন্দা করে যুক্তরাষ্ট্র যে নিয়মিত বিবৃতি দেয় এবার নিজেদের বিরুদ্ধে সেই বিবৃতি দিতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71